বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবনে মৌচাকে পাওয়া যাচ্ছে না আশানারুপ মধু। ফলে মৌয়ালরা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছে। পুঁজি বাঁচাতে পারবে না এ আশঙ্কায় উপকুলের অনেক মৌয়াল এলাকায় ফিরে আসছে। অনাবৃষ্টি ও অতিতাপমাত্রার কারণে গাছের ফুল ভালো হয়নি, তাপমাত্রার কারণে মৌমাছি ঠিকমত চাক তৈরী করতে পারেনি। তাছাড়া চাকে মধুর জমাট তেমন বাঁধেনি। অতিতাপমাত্রায় বনে মৌমাছি বিপন্ন হয়ে পড়েছে বলে বন থেকে ফিরে আসা মৌয়াল ও বন বিভাগ সূত্রে দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ কে জানান -এ বছর আগাম সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু হয়েছে। দেশে মধু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মৌয়াল বন বিভাগের অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে বনে মধু সংগহ করতে যায়। মৌয়ালরা ফলসি, গরান, গর্জন, কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু সংগ্রহ করে থাকে। এসব গাছে মৌমাছি মধুর চাক তৈরি করে। প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়। মে মাস পর্যন্ত মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে থাকে। একশ্রেণির লোক বন থেকে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ায় এবার আগাম মধু সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।
পূর্বসুন্দরবনের বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বেশি মধু সংগ্রহের জন্য এবার মৌসুম শুরুর ১৫ দিন আগে মৌয়ালদের ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের পাস দেয়া হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে পূর্ব সুুন্দরবন থেকে এক হাজার ৪৪ কুইন্টাল মধু, ৩১৩ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ হয়। এ থেকে ১০ লাখ ৯৬ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
খুলনা সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্চ এর আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যয় ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বুড়িগোয়ালিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে সাতক্ষীরা রেঞ্জের মধু আহরনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনী ঘোষণা করা হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড: আবু নাসের মোহসিন হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা রেঞ্চ সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান।
তিনি বলেন, প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু আহরন এর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের মধু ফুল খ্যাত খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫/২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। যার কারণে এ বছর ১৫ মার্চ মধু আহরণের আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। তিনি আরও বলেন এ বছরে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫শ’ কুইন্টাল ও মোম ২৬৫ কুইন্টাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে মধু আহরন করবেন এবং খাঁটি মধু লোকালয়ে এনে বিক্রি করবেন। যাতে আপনারা প্রকৃত দাম পেয়ে থাকেন। তবে বনবিভাগের আগাম মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্য সফল হয়নি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে।